নিজস্ব প্রতিবেদক : সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গণপরিবহনে অভিনব কায়েদায় ডাকাতির ঘটনায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা হাজার-হাজার গাড়ির যাত্রীদের মনেও সৃষ্টি হয়েছে উৎকণ্ঠা। তবে নিরাপত্তা নিয়ে সেই উৎকণ্ঠা দূর করতে এবার আন্তজেলা বাস ও মিনিবাসে যুক্ত হচ্ছে ‘প্যানিক বাটন’। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন বাস বা মিনিবাস ডাকাতদের কবলে পড়লে এই বাটনটিতে চাপ দিলেই স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে পুলিশ, ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা পাবেন যাত্রীরা।
সম্প্রতি ঢাকার আব্দুল্লাহপুর থেকে বাসে টাঙ্গাইলে যাওয়ার পথে শফিকুল ইসলাম নামে একজন চিকিৎসক ডাকাতের কবলে পড়েন। এই ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সদস্যরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ২৭ ডাকাতকে গ্রেফতার করে। তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এই ডাকাত চক্রটি ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলায় ডাকাতি করতো। তারা ঘুরেঘুরে বাসে যাত্রী তুলতো, এরপর ডাকাতি করতো।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণপরিবহনে ডাকাতি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। এসব অপরাধীর হাত থেকে যাত্রীদের বাঁচাতে গণপরিবহনে এই প্যানিক বাটন বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগে বাস মালিক ও সমিতির সঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ‘প্যানিক বাটনের’ প্রস্তাব দেওয়া হয়। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনে বাস মালিকরা রাজি হন। এরপর এই উদ্যোগ কার্যকরে পদক্ষেপ নেয় পুলিশ।
ডিএমপি জানিয়েছে প্রতিদিন ঢাকায় হাজার হাজার গাড়ি প্রবেশ করে, বের হয়। তল্লাশি চৌকি বসিয়ে এসব গাড়ি একটি একটি তল্লাশি করা হলে, সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে। যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষও হয়রানির শিকার হতে পারেন। কিন্তু ডিজিটাল ডিভাইস বসানো হলে সহজেই ডাকাতের কবলে পড়া গাড়িগুলো শনাক্ত করতে পারবে পুলিশ। ডাকাত প্রতিরোধ করতে পারবে।
এ প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএমপির ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে রাতে চলাচলকারী পরিবহনগুলোতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করাতে চাই। আমরা সকল বাস মালিকদের এবিষয়ে উৎসাহ দিবো।’
বাসের কোনও এক জায়গায় একটা প্যানিক বাটন থাকবে। যার অবস্থান বাসের চালক এবং তার সহযোগী জানবেন। বিপদে পড়লে এই তারা এই বাটনে চাপ দেবেন। এভাবে পুলিশের সহায়তা চাইবেন, যা ডাকাতরা টের পাবে না।
বাস ডাকাতের কবলে পড়লে জরুরি প্রয়োজনে ‘প্যানিক বাটনে’ চাপ দেওয়ার সাথে সাথে তিনটি বার্তা যাবে। তিনটি বার্তার একটি জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ, দ্বিয়তীয় বার্তাটিতে বাসটির জিপিআরএস লোকেশনের তথ্য পাবেন সংশ্লিষ্ট থানা বা পুলিশ সুপার, তৃতীয় বার্তাটি পাবেন বাসের মালিক বা ম্যানেজার। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বার্তাটি পাওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশ ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করে সর্বশেষ লোকেশন নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবে। পুলিশ বাসটিকে অনুসরণ করে ডাকাতদের গ্রেফতার করবে।
‘প্যানিক বাটন’ সংযুক্ত করা পরিবহনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া ছাড়াও আরও কিছু সুবিধা মিলবে। রিয়েল টাইম ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সবসময় গাড়ির অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। মালিক ও পুলিশ গাড়িটির রুট ট্র্যাক করতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বাসটির সকল তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। গাড়িটির মাইলেজ রিপোর্ট পাওয়া যাবে। গাড়িটি ওভার স্পিড হলে চালককে সতর্ক করা যাবে।
‘প্যানিক পাটন’ প্রযুক্তি বাসে সংযুক্ত করার বিষয়ে বাস মালিকরা ইতিবাচক সারা দিয়েছেন। এই বাটন ব্যবহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা বিশ্বাস করেন এতে ডাকাতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘বাস ডাকাত প্রতিরোধে পুলিশ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তার সবগুলোতে আমাদের সহযোগিতা অতীতেও ছিল, আগামীতেও থাকবে। এটা আমাদের জন্যও ভালো হবে।’
ডিএমপির কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধ দমনের এই উদ্যোগের বিষয়ে আমরা বাস মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাদের মতামত নিয়েই এই প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।’